মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:১৯ পূর্বাহ্ন
খেলাধুলা ডেস্ক:
বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনাকে ঢাকায় আনার উদ্যোগের ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। ২০১১ সালের পর আবারও বাংলাদেশ সফরে আসতে আপত্তি নেই লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার। কিছু শর্ত নিয়ে আলোচনা চলছে, সেগুলো মিলে গেলে আগামী জুন-জুলাইয়ে ফিফা উইন্ডোতে ঢাকায় একটি ম্যাচ খেলবে গত ডিসেম্বর ফ্রান্সকে হারিয়ে ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ জেতা আর্জেন্টিনা। মেসি ও আর্জেন্টিনাপ্রেমীদের জন্য এটা অনেক বড় সুসংবাদ।
তবে মেসিদের আনার উদ্যোগ নেওয়া বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের জন্য কি সত্যিই এটা হবে অনেক বড় সাফল্য? ২০১১ সালে আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়াকে ঢাকায় খেলিয়ে বেশ বাহবা পেয়েছিলেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। তবে সেটা করতে গিয়ে বাফুফের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন বিশাল ঋণের বোঝা। যা এক যুগেও পরিশোধ করতে পারেননি। অতীতের ঋণের বোঝা নিয়ে আবারও মেসির দলকে আনার বিলাসী স্বপ্ন দেখছেন সালাউদ্দিন।
আর্জেন্টাইন ফুটবল সংস্থার কাছে জাতীয় দলকে ঢাকায় খেলানোর আগ্রহের কথা জানিয়েছিল বাফুফে। বাংলাদেশে আর্জেন্টিনা ও মেসিকে নিয়ে আকাশছোঁয়া উন্মাদনার ব্যাপারটা খুব জানা আর্জেন্টিনা ফুটবল সংস্থার। এ কারণেই বাফুফের প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে আর্জেন্টিনা। বিষয়টি নিশ্চিত করে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আর্জেন্টিনার ঢাকা সফর যে পুরোপুরি চূড়ান্ত সেটা বলব না। তবে তাদের কাছ থেকে আমরা ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। কিছু টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন নিয়ে আলোচনা চলছে। সেগুলো মিলে গেলে আর্জেন্টিনা দল ঢাকায় একটি ম্যাচ খেলতে আসবে।’ মেসিদের প্রতিপক্ষ প্রসঙ্গে সোহাগ বলেন, ‘প্রতিপক্ষের ব্যাপারে আর্জেন্টিনার পক্ষ থেকে খুব বেশি শর্ত নেই। তারা কিছু দলের নাম দেবে। আমরাও কিছু প্রতিপক্ষের কথা ভাবছি। তবে মানসম্পন্ন প্রতিপক্ষই থাকবে মেসিদের।’
২০১১ সালে ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ম্যাচ আয়োজন করতে গিয়ে আইএফআইসি ব্যাংকের কাছ থেকে ৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল বাফুফে। সেই ঋণ তো পরিশোধ হয়ইনি, বরং এক যুগ পরেও সেটা একই অঙ্ক রয়ে গেছে। বাফুফে এ সময় কেবল সুদের অঙ্ক গুনেছে। ঋণ বকেয়া থাকার বিষয়টি স্বীকার করে সোহাগ বলেন, ‘সেটা এখনো আছে। আমরা প্রতি বছর অডিট রিপোর্টে ঋণের বিষয়টি উল্লেখ করি। তবে এটা নানাভাবে আমরা এডজাস্ট করছি। দেখে থাকবেন আমাদের বিভিন্ন আয়োজনে আইএফআইসি ব্যাংকের বিলবোর্ড থাকে। এভাবেই একটা সময় বকেয়াটা পরিশোধ হয়ে যাবে।’
২০১১ সালে মেসিরা যখন প্রথম ঢাকায় এসেছিলেন, বিশ্ব র্যাংকিংয়ে তখন বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬০-এর নিচে। এক যুগ পর এবার মেসিরা আসছেন বিশ্বসেরার তকমা নিয়ে। অথচ বাংলাদেশ এই এক যুগে র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে রয়েছে ১৯২তম স্থানে। অর্থাৎ মেসিদের ম্যাচ এদেশের ফুটবলপ্রেমীদের আনন্দ দিলেও, আক্ষরিক অর্থে ফুটবলের উন্নতিতে কোনো ভূমিকা রাখেনি। দেশের ফুটবলকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়ে মেসিদের জন্য নিজেদের মাঠকে কমিউনিটি সেন্টারে রূপ দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক এ নিয়েও উঠে গেছে প্রশ্ন। তবে অনেক নেতিবাচক কারণে নিয়মিত শিরোনাম হওয়া বাফুফে প্রায় একশ কোটি টাকা খরচে মেসিদের ম্যাচ আয়োজনের উদ্যোগ নিয়ে চাইছে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে। আগের ঋণই যারা শোধ দিতে পারছে না, তারা কীসের জোরে আবারও বাফুফেকে পাহাড় সমান চাপের মুখে ঠেলে দিতে চাইছে, তা এখনো অজানা। সরকার এক্ষেত্রে অর্থ সহায়তা দেবে কিনা, তা সময়ই বলে দেবে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে সেই ম্যাচের প্রস্তাবিত ভেন্যু বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করে ম্যাচ আয়োজন উপযোগী করে তোলার প্রতিশ্রুতি মিলেছে।
ভয়েস/আআ